🔶শবে মেরাজ উপলক্ষে আমাদের সমাজে কিছু নামাজ এবং রোজা প্রসিদ্ধ রয়েছে। বিশেষত মেরাজের রাতে মসজিদের মিম্বরে মিম্বরে কিছু হাদিস এ রাতের বিশেষ ফজিলত সম্পর্কে শুনানো হয়।
‘মকসুদুল মুমীনীন এবং ‘বারো চান্দের ফযীলতথ নামক অনির্ভরযোগ্য কিতাবাদির কারণে এ ধরণের বেদআতি আমল সমাজে প্রচলিত হয়ে গেছে। প্রথমে ‘বারো চান্দের ফযীলতথ থেকে বর্ণনাগুলো শুনি।
সেখানে বলা হয়েছে- “এক বর্ণনায় রয়েছে: শবে মিথরাজের রাত্রিতে দুই রাকায়াতের সূরা ফাতিহার পরে তিনবার করিয়া সূরা ইখলাস পাঠ করিবে। এবং দুই রাকায়াতের পর ২০০ বার রু শরীফ পাঠ করিবে এবং হাত তুলিয়া আল্লাহর কাছে মুনাজাত করিবে। এই নামাযী ব্যক্তি অসংখ্য সওয়াব লাভ করিবে, তাহার ঈমান মুজবুত হইবে এবং আল্লাহর রহ,ত বর্ষিত হইতে থাকিবে। অন্য এক বর্ণনায় বর্ণিহ হইয়াছে, শবে মিথরাজের রজনীতে দুই রাকয়াতের নিয়তে মোট চার রাকয়াত নামায আদায় করিবে। এই নামাযের প্রত্যেক রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পরে যে কোনো সূরা মিলাইয়া পাঠ করিবে। নামায শেষ করতঃ কালেমায়ে তামজীদ, দুরুদ শরীফ ও তওবায়ে ইস্তিগফার প্রত্যেকটি ১০০ বার করিয়া পাঠ করিবে। অতঃপর সিজদায় যাইয়া আল্লাহ তায়ালার রবারে যেই সমস্ত বিষয় নেক আকাংখা করিবে, তিনি তাহা কবুল করিবেন”। ( বার চান্দের ফযীলত, পৃষ্ঠা নং ২৩)
এ ধরণের কোন নামাজেরর কথা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। সবগুলো মানুষের বানানো এবং বানোয়াট।
🔶প্রথমত শবে মেরাজ কোনদিন? সেটা নির্ধারিত নয়। বিস্তর মতবিরোধ রয়েছে। প্রায় বিশোর্ধ মত হাফেজ ইবনে হাজার নকল করেছেন৷ শবে মেরাজের নামাজ সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো সম্পর্কে কিছু মুহাদ্দিসদের বক্তব্য নকল করছি। বিখ্যাত মুহাদ্দিস হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, রজব মাসের মর্যাদা, সে মাসে রোজা রাখা এবং সে মাসের বিশেষ কোনো রাতের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে লীলযোগ্য কোনো সহিহ হাসি নেই। আমার পূর্বে ৃঢ়তার সাথে এমনটা বলেছেন হাফেজ ইমাম আবু ইসমাইল আল হারাওয়ী।
আমরা তাঁর থেকে সহিহ সনে এমনটা বর্ণনা করেছি। এমনভাবে অন্য থেকেও এমনটা বর্ণিত হয়েছে। (তাবয়িনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফি শরহি রজব, পৃষ্ঠা নং ২, মাকতাবাতুশ শামেলা।) হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী এখানে স্পষ্ট বলেছেন যে, রজব মাসের কোন রাতের বিশেষ নামাজের ফজিলত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়।
শবে মেরাজ যেহেতু আমাদের দেশে ২৭ তারিখে পালন করা হয়, সুতরাং এ রাতের বিশেষ নামাজ সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। আল্লামা ইববে রজব হাম্ভলি রহ. বলেন, রজব মাসের বিশেষ কোন নামাজ সহিহভাবে প্রমাণিত নয়। (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা নং ১৬৪, ারুল হাীস কাহেরা।) বর্ণনাটি সম্পর্কে আল্লামা আবদুল হাই লাভনবি রহ. বলেন, বর্ণানাটি ইমাম বায়হাকি মুহাম্মাদ বিন ফাযল বিন আতীয়া এর ও সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত। মুহাম্মাদ বিন ফাজল বর্ণনা করেন আবান থেকে। তিনিও মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. ‘তাবয়িনুল আযাবথ- এ হাদিসটিকে জাল বলেছেন। ( দেখুন, তাবয়িনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফি শাহরি রাজাব, পৃষ্ঠ নং ২১. মাকতাবাতুশ শামেলা। আল আছারুল মারফুআ, পৃষ্ঠা নং ৪৮) এ ধরণের আরেকটি বর্ণনা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. উল্লেখ করেছেন এবং জাল বলেছেন। মোটকথা হলো, শবে মেরাজ উপলক্ষে কোনো বিশেষ নামাজ বা রোজা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। এছাড়া রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের এ উপলক্ষে বিশেষ কোন আমলের নির্দেশ দেননি। এজন্য শবে মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ কোন ইবাদত করা বেদআত।
আল্লাহ আমাদের কে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।
______________________
লেখক:
মুফতি জাকারিয়া মাসউদ।।
প্রধান মুফতি, কাশফুল উলুম নেছারীয়া মাদরাসা নেছারীবাদ, সিংড়া, নাটোর।
- বিশ্ব ইজতেমা ।Bishwa Istema ১ম পাঠ জানতে ক্লিক করুন 👇
বিশ্ব ইজতেমা ।Bishwa Istema এর বিভিন্ন তথ্য
- বিশ্ব ইজতেমা ।Bishwa Istema ২য় পাঠ জানতে ক্লিক করুন 👇
বিশ্ব ইজতেমায় কেন যাবেন , ইজতেমায় গিয়ে শপিং করা যাবে কি ।
- বিশ্ব ইজতেমা ।Bishwa Istema ৩য় পাঠ জানতে ক্লিক করুন 👇
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত | Bishwa Ijtema comes to an end with Akheri Munajat
0 Comments