বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত | Bishwa Ijtema comes to an end with Akheri Munajat | দাওয়াত ও তাবলীগের কারগুজারী
১২ জানুয়ারী বৃহঃস্পতিবার সন্ধা। আমরা পাচঁ সাথী - জনাব, জামাল উদ্দীন, জনাব আমীর উদ্দীন ওরফে রায়না, জনাব ফয়েজ আহমদ,কামরুল ইসলাম ও আমি অধমসহ কাঞ্চপুর থেকে বড়লেখা উপজেলা মসজিদে উপস্থিত হলাম। সেখানে আরো সাথী নিয়ে মাওলানা ইমাদুদ্দিন সাহেবের জিম্মাদারীতে বাস রিজার্ভ করে ৪৮ সাথীসহ সফর শুরু হয় ঢাকা- টঙ্গীর পথে। সফরও একটি ইবাদত।সর্বনিম্ন ৪৮ মাইল পরিমাণ ভ্রমনের উদ্দেশ্য বের হলে সফরে বিধান শুরু হয়। কয়েক অবস্থায় দোয়া কবুল হয়,এর মধ্যে একটি হচ্ছে সফর। তাই এ অবস্থায় মনে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করলাম,নিজের জন্য ও উম্মতের জন্য।
✎ আমাদের সফরটি ছিলো নবীওয়ালা সফর। বিশ্ব ইস্তেমার সফর।দাওয়াত ও তাবলিগের সফর।
আলহামদুলিল্লাহ। রাত প্রায় ৪ টায় আমাদের কাফেলা টঙ্গী পৌঁছে। ১৯৭২ ইংরেজী থেকে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীর,ডোবা-নালা সহ ১৬০ একর বিশাল এলাকা জুড়ে ইজতেমার ময়দান , কিন্তু উপস্থিতিদের তুলনায় ময়দানটি ছোট। এ বছরতো ইজতেমার ময়দানে লোকের জায়গা হবে তো দূরের কথা বরং Bishwa Ijtema এর পার্শবর্তী এলাকা সুইচ গেইটে জায়গা হয়নি।
✎ এ বছর ঈমানদাররা আল্লাহর রাস্থায় বের হওয়া কষ্ট একটু হলেও বুজেছে।নদী মাতৃক দেশ বাংলাদেশে আমরা মরুভূমির দেশের মত পানির অভার সামান্য হলেও বুঝেছি। অযু-ইস্তেন্জার জন্য পনি কিনতে হয়েছে। ইজতেমা ঘিরে ব্যবসায়ীর পানির দামটা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়ছিলো।
অনেকে পাশ্ববর্তী এলাকা বাসা থেকে আলহামদুল্লিাহ পানি আনার সুযোগ পেয়েছেন। আমরা অবস্থান করেছিলাম সুইচগেঠ এলাকায়।যেখানে ওযুর জন্য ১০, পেশাবের জন্য ৫, গোসের জন্য ৩০ ও টয়লেটের ২০ টাকা প্রধান করতে হয়।এটা তো আল্লাহ তা’য়ালার দেওয়া ঈমানী পরিক্ষা। তিনি বান্দাদের থেকে ঈমানের পরিক্ষা ;নেন।
যাইহোক আমরা পাঁচজনের কাফেলা একসাথে ই ৭৬নং খিত্তায় অবস্থান করি।হালকা কষ্ঠ থাকলেও ইজতেমায় অংশ নিয়ে স্বাদ ই আলাদা, এটা ঈমানের স্বাদ।
ijtema bayan শুনার স্বাদ। ইজতেমার বয়ান মানে ইসলাহী বয়ান। যা শুনে অগনিত মানুষ সঠিক পথের দিশা পেয়ে থাকে।নিজেদের আমল সংশোধন করে,নিজেদের কলব পাক ও সুস্থ করে তোলে। আর কলবের সুস্থতা ই হলো প্রকৃত সুস্থতা। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যার মোটামুটি তরজমা হলো - “ জেনে রেখো- তোমাদের দেহে একটি গোশতের টুকরা আছে,যখন তা সুস্থ থাকবে তখন সমস্ত শরির ঠিক থাকবে আর যখন তা মলিন থাকবে তখন সমস্থ শরির অসুস্থ হয়ে যাবে।শুনো আর এটাই হলো ক্বালব”
দেশ - বিদেশের অনেক উলামায়ে কেরাম, বযুর্গানে দ্বীন এ তিন দিন দ্বীনি বয়ান করেছেন।আর অসংখ্য আল্লাহর বান্দারা পরিতৃপ্তও হয়েছেন।
বিশ্ব ইজতেমায় সরকারী অবদান ছিলো অনেক।প্রথম অবদান তো ইজতেমার ময়দান, যা প্রদান করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান - আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন - প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও বাংলাদেশ সরকারের কতৃক বিশ্ব ইজতেমায় আগত মেহমানরা সেবা পেয়েছেন। স্থল পথ,আকাশ পথ ও নৌপথ সহ বিভিন্ন স্থানে টহল দিয়েছে পুলিশ সহ অনেক নিরাপত্তা কর্মী।সেনা বাহিনীরা ইজেতেমার বিভিন্ন এলাকায় সিসি ক্যামরা লাগিয়ে পাহাড়া দিতে দেখা গেছে।সরকারী মেডিক্যাল ক্যাম্প,পানি সরবরাহ সহ অনেক সেবা পেয়েছে মেহমানরা।এর অর্থ এটা নয় যে, বিশ্ব ইজতেমা পরিচালনা কমিটি কতৃক কোন সেবা পাওয়া যায়নি।বরং ইজতেমা মেহমানদের জন্য বিশ্ব ইজতেমা কমিটি কতৃক যে সেবা ছিলো,তা যতেষ্ট পরিমাণ ছিলো।
বিশ্ব ইজতেমায় এ বছরের লোকদের সংখ্যা ছিলো অনেক।আমাদের মৌলভীবাজার জেলা খিত্তায় তাশকিল করতে গিয়ে একজন দ্বীনে দ্বায়ী আলেমেদ্বীন বলেন - এ বছরে Bishwa Ijtema বা বিশ্ব ইজতেমা আগত মেহমান হলো ৭০ থেকে ৮০ লাখ,আর কোন কোন News বা সংবাদ মাধ্যমে ৩০ লাখ বলে মন্তব্য করেছে। আসলে ইসলামের প্রচার সংবাদ বলে কথা। সংবাদ পত্রে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সঠিক সংবাদ দিতে চায়না মিডিয়াগুলো। অতচ খেলা ও খেলোওয়াদের, গান ও গায়কদের সহ যত্তসব বাজেখবর প্রচার হয় খুব। প্রতিদিন প্রথম পৃষ্টায় থাকে শয়তান ও তার দোষরদের নিউজ।আর চাপা রয় সত্য সংবাদগুলো।
ইজতেমার আখেরী মোনাজাত এর মাধ্যমে শেষ হলো ৫৬ তম বিশ্ব ইজতেমা ২০২৩, আখেরি মোনাজাতের দোয়া পরিচালনা করেন তাবলিগের মুরব্বি, ঢাকা কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা যুবায়ের আহমদ ( হাফিঃ) । আল্লাহর কাছে মোনাজাত করেন যে, ”আয় আল্লাহ আমাদের মাফ কইরা দেন।আয় আল্লাহ ঈমানের সহিত জিন্দেগী নসিব করেন। ঈমানের সহিত মওত নসিব করেন। আয় আল্লাহ ঈমানের উপর মজবুত রাখেন। আয় আপনার ‘না ফরমানি থেকে আমাদের হেফাজত রাখেন। আয় আল্লাহ ফাসাদকে খতম কইরা দেন।”
এভাবে তিনি সকল উম্মতের জন্য প্রায় আধ ঘন্টা আল্লাহর দরবারে কাঁদেন। লাখ লাখ মানুষের কান্নার আওয়াজে আলাদা একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যার অনুভূতি প্রার্থনারত ব্যাক্তিরা বুঝতে পারবে।
বিশ্ব ইজতেমায় আগত মেহমানদের বাড়ি ফেরা- অনেকে বিশ্ব ইজতেমায় দুনিয়াতে থেকে বিদায় নিয়ে সৌভাগ্যের মৃত্যু লাভ করেন।যাদের জানাযা হয়েছে লাখ লাখ আল্লাহ ওয়ালাদের উপস্থিতিতে।অনেকে তো বিশ্ব ইজতেমা থেকেই আল্লাহর রাস্তা - দাওয়াত ও তাবলিগ বের হয়ে যান। ourislam এর’ তথ্য : “এবারের বিশ্ব ইজতেমা থেকে মোট জামাত বের হয়েছে ২৭৭৪টি” ( A total of 2774 congregations came out of this year's Bishwa Ijtema )
যার বের হতে পারেননি আগামীতে বের হওয়ার সংকল্প নিয়ে বাড়ি ফিরেন।
0 Comments