Ticker

6/recent/ticker-posts

গীবত ও তার ভয়াবহতা

 


আত্মাধিক রোগ-ব্যাধির বড় একটি রোগের নাম হচ্ছে গীবত।হাদিস শরিফে নবিজী-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-গীবতের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন,তোমাদের কি জানা আছে, গীবত কাকে বলে! সাহাবারা উত্তর দিলেন, আল্লাহ ও তার রাসূল ভালো জানেন।নবিজী বললেন: (গীবত হলো) তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কিছু বলা,যা সে অপছন্দ করে।একজন প্রশ্ন করলেন:আপনি এ ব্যাপারে কি বলবেন,যদি সে দোষটি যদি আমার ভাই এর মধ্যে থাকে যা আমি বলি? নবিজী বললেন, তোমার বর্ণনা অনুযায়ী সে দোষ যদি তোমার ভাই’র মধ্যে পাওয়া যায়,তাহলে তুমি গীবত করলে; অন্যতায় তুমি তাকে অপবাদ দিলে।(মুসলিম)



গীবত এর শাস্তি

কারো গীবত করা, গীবত শুনা, গীবত করতে সহায়তা করা হারাম ও কবিরা গুনাহ।

গীবত খুবই ঘৃণ্য ও অপছন্দীয়।কুরআনে কারিমে কুরআনে কারীমে এরশাদ হয়েছে-

وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ [سورة الحجرات:١٢]    

তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে,তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাই’র  গোশত খেতে পছন্দ করতে পারে! অতচ তোমরা তা অপছন্দ করো।আল্লাহকে ভয় করো। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাওবা কুবুল কারী ও পরম দয়ালু। (সূরা হুজরাত,আয়াত:১২)

হাদীস শরীফে নবিজী-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেন,الغيبة أشد من الزناء অর্থাৎ: গীবত যিনার চেয়েও মারাত্মক।[মেশকাত, বায়হাকি]


গীবত এমন এক অপরাধ,যার শাস্তি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা-ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতে দেন। ইহকালের শাস্তি সম্পর্কে নবিজী বলেন:

عَنْ أَبِي بَرْزَةَ الأَسْلَمِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يَدْخُلِ الإِيمَانُ قَلْبَهُ لاَ تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِينَ وَلاَ تَتَّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ فَإِنَّهُ مَنِ اتَّبَعَ عَوْرَاتِهِمْ يَتَّبِعِ اللَّهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ يَتَّبِعِ اللَّهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ فِي بَيْتِهِ ‏”‏ ‏.‏

আবূ বারযাহ আসলামী থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেন,হে ঐসব লোক,যারা অন্তর দিয়ে ঈমান না এনে শুধু মুখে ঈমান এনেছো! তোমরা মসলমানের গীবত করোনা ও তাঁদের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ করোনা।কেননা যে তাঁদের দোষ খোঁজবেে,আল্লাহও তাদের খোঁজবেন।আর আল্লাহ যার দোষ খোঁজবেন;তাকে তিনি তার ঘরেই অপদস্থ করে ছাড়বেন।সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৮৮০

রইলো পরকালীন শস্তি।এ সম্পর্কে আনাস ইবনে মালিক রাঃ এর বর্ণনা-

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لَمَّا عُرِجَ بِي مَرَرْتُ بِقَوْمٍ لَهُمْ أَظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ يَخْمِشُونَ وُجُوهَهُمْ وَصُدُورَهُمْ فَقُلْتُ مَنْ هَؤُلاَءِ يَا جِبْرِيلُ قَالَ هَؤُلاَءِ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ لُحُومَ النَّاسِ وَيَقَعُونَ فِي أَعْرَاضِهِمْ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو دَاوُدَ حَدَّثَنَاهُ يَحْيَى بْنُ عُثْمَانَ عَنْ بَقِيَّةَ لَيْسَ فِيهِ أَنَسٌ ‏.

রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেন, মেরাজের রাতে এমন এক সম্প্রদায়ের পার্শ্ব অতিক্রম করি,যাদের নখ ছিলো তামার;তারা নিজেদের চেহারা ও বুকে আঁচড় মারছিলো।জিজ্ঞাসা করলাম, হে জিব্রীল! ঐসব লোক কারা? জিব্রীল উত্তর দিলেন, ওরা হচ্ছে ঐসব লোক যারা মানুষের গোশত খেত অর্থাৎ গীবত করত এবং তাদের সম্মানে আঘাত করত।সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৮৭৮


বড় কথা হলো গিবত মানুষের ঈমান ও আমল ধ্বংস করে দেয়। পার্থিব ও অপার্থিব কল্যাণ দূর করে দেয়। ইসলামে কাউকে সামনে থেকে নিন্দা করাও মারাত্মক অপরাধ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পেছনে ও সামনে প্রত্যেক পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ-ধ্বংস।’ (সুরা হুমাজাহ, আয়াত : ০১)

তাছাড়া গীবতকারীর নেক আমল যার গীবত করা হয় তার আমলনামায় চলে যায় বলে বর্ণনা পাওয়া যায়তাই প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ হলো গীবত বেঁচে নিজের আমলের হেফাজত করা। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সবাইকে গীবত নামক মহামারী থেকে হেফাজত করুন

গীবত কি

Post a Comment

0 Comments