ইসলামের দৃষ্টিতে শবে বরাত | shab e barat 2023
শবে বরাত কি? শবে বরাতের বিশ্লেষণ ও পরিচয় :
আল্লহ তায়ালা কিছু রাত্রিকে মর্যাদা দিয়েছেন , আরবি শাবান মাসের ১৪ ই শাবান দিবাগত রাতটি হলো অন্যতম।বাংলাদেশ সহ এশিয়া উপমহাদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রে এ রাত “ শবে-বরাত “ হিসেবে পরিচিত। “শবে বরাত” (شب برات ) মূলত ফার্সি ও আরবি ভাষার দুটি শব্দের সমন্বয়ে একটি নাম হিসেবে পরিচিতি লাভ হয়। শব ( شب ) শব্দটি ফার্সি ,যার অর্থ হলো রাত। আর বরাত (برات) অর্থ মুক্তি; সুতরাং শবে বরাত ( شب برات ) এর অর্থ দাড়ায় মুক্তির রাত। কেননা আল্লাহ তায়ালা এ রাতে তার অগনিত বান্দা-বান্দীদের গোনাহ থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন, তাই এ রাতকে শবে বরাত অর্থ্ৎ মুক্তির রাত বলা হয়।আবু কাসিম জমখশরি রহঃ বলেন., শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতের চারটি নাম রয়েছে।
(১) লাইলাতুল মুবারাকাহ (২) লাইলাতুল বারাআহ (৩) লাইলাতুস সিক্ক (৪) লাইলাতুর রাহমাহ
What is the Islamic date of Shab-e-Barat?
shab e barat 2023 date in bangladesh : Holy shab e barat will be after sunset on Tuesday, March 7
পবিত্র শবেবরাত শুরু হবে আগামী ৭ ই মার্চ রোজ মঙ্গলবার দিবাগত রাত
কুরআন আলোকে শবে বরাতঃ
কুরআনে কারিমে শব বরাতের আলোচনা নেই । কিছু সংখ্যক মুফাচ্ছির সুরা দুখানের ৩নং আয়াতে لَيۡلَةٍ مُّبٰـرَكَةٍ দ্বারা ” শবে বরাত “ উদ্দেশ্য করেছেন কিন্তু তাদের সপক্ষে দেওয়া বর্ণনা একদম দূর্বল। ( মা’রিফ )
হাদিসের আলোকে শবে বরাতঃ
হাদিসে শরিফে এ রাতকে শবে বরাত ( شب برات ) বলা হয়নি ।বরং হাদিস শরিফে এ রাতকে ليلة النصف من شعبان অর্থাৎ অর্ধ-শাবানের রাত বলা হয়েছে। এ রাতটি গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ রাত,যা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।আমাদের সমাজে অনেকে এ রাতটিকে শবে কদরের চেয়ে বেশি শ্রেষ্টত্ব দেন যা বেদাতের পর্যায়ে পৌছে যায়; আবার অনেকে শবে বরাতকে অস্বীকার করেন,যা মারাত্বক অন্যায় ও হাদীস অস্বীকার করার নামান্তর। শবে বরাত সম্পর্কে বেশ কয়েকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে,যার বেশির ভাগ হাদিসের সনদ দূর্বল।
শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে ইবনে হিব্বান তার ‘কিতাবুস সহীহ’ তে ৫৬৬৫ নং হাদীসে বর্ণনা করেন -
عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان، فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن
অর্থাৎ হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবীজি - সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম - বলেন, আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে তার সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করে মুসরিক অথবা হিংসুক ছাড়া সমস্ত সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন।
শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে হযরত আলা ইবনুল হারিছ রাহ. এর এত বর্ণনা রয়েছে যার মতলব তরজমা হলো, আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. বলেন, একবার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাযে দাড়ালেন আর এত লম্বা সেজদা করলেন যে, আমার মনে হলো নবীজী হয়তো মৃত্যু বরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। নবীজী সেজদা থেকে উঠে নামাজ শেষ করে আমাকে বললেন, হে আয়েশা অথবা নবীজী বললেন, ও ও হুমায়রা, তোমার কি আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক বিনষ্ট করবেন ? আমি বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার লম্বা সেজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি জানা আছে, এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ইরশাদ করলেন-
هذه ليلة النصف من شعبان، إن الله عز وجل يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان، فيغفر للمستغفرين ويرحم المسترحمين ويؤخر أهل الحقد كما هم.
অর্থাৎ এটি হচ্ছে অর্ধ শাবানের রাত্রি। আল্লাহ তায়াল অর্ধ শাবানের রাত্রিতে তার বান্দাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন।যারা ক্ষমা প্রার্থনা করে,তাদেরকে ক্ষমা করে দেন, যারা দয়া চায়,তাদেরকে দয়া করেন। আর হিংসুকদেরকে তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দেন (অর্থাৎ তাদের কে ক্ষমা করেন না)
শবে বরাতের আমল :
শবে বরাতের আমল হলো, রাতের বেলায় নামাজ পড়া আর দিনের বেলায় রোজ রাখা। অনেকে প্রশ্ন করেন - শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত ? আসলে শবে বরাতের নির্দিষ্ঠ নামাজের রাকাত নেই , বরং যত রাকাত সম্ভব পড়া যায়। আর নির্দিষ্ঠ কোন সূরাও নেই,যা অনেকে মনে করেন।
আমল সম্পর্কে বিস্তরিত আলোচনা পরবর্তীতে নিয়ে আসছি ইনশাল্লাহ।
0 Comments