আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আঃ) ও হযরত ইদ্রীস (আঃ) এর পরহযরত নূহ আঃ কে সর্বপ্রথম দুনিয়াতে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেন।কুরআনে কারীমে আল্লা্হ তায়ালা পাঁচজন নবীকে উলুল আজম বলেছেন,তন্মদ্ধে হযরত নূহ (আঃ) হলেন অন্যতম।
হযরত নূহ আঃ তার জাতিকে সাড়ে নয়শত বৎসর দাওয়াত দেন, তিনি নিজ সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘হে আমার জতি- আমি তোমাদের একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী যে,তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো,তাঁকে ভয় করো আর আমার আনুগত্যতা করো,তাহলে তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে তোমাদেরকে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সুযোগ দিবেন।নিঃসন্দেহে, আল্লাহর (নির্ধারত) সময় এসে গেলে বিলম্ব হবে না।যদি তোমরা জানতে”
হযরত নূহ আঃ এর দাওয়াতের ফলে মাত্র ৪০/৪২ জন, কোন বর্ণনায় ৮০/৮২ জন ঈমান আনয়ন করে। তাই নূহ আঃ আল্লাহ তায়ালাকে বলেন, ‘‘ হে প্রভূ! আমি স্বজাতিকে দিবারাত্রি দাওয়াত দিয়েছি কিন্তু আমার দাওয়াতে তারা শুধু পালিয়েছে..
হে আমার রব! পৃথিবীতে বসবাসকারী কোন কাফেরকে আপনি ছেড়ে দিবেন না। যদি আপনি তাদেরকে ছেড়ে দেন ,তো তারা আপনার বান্দাদেরকে পথহারা করবে আর তাদের থেকে পাপিষ্ঠ কাফের ই জন্ম হবে।”
নূহ নবীর নৌকার ঘটনা
আল্লাহ তায়ালা হযরত নূহ (আঃ) এর অভিযোগ শুনেন ও উম্মতের প্রতি তার বদদোয়া কুবুল করেন, তার উম্মতকে মহাপ্লাবনে ধ্বংস করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। তাকে জাহাজ তৈরির নির্দেশ দিতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘‘ আর তুমি আমার সামনে আমার তত্ববধানে নৌকা তৈরি করো।জালেমদের সম্পর্কে তুমি আমার সাথে কথা বলোনা।অবশ্যই তারা ডুবে মরবে” ( সূরা হুদ, আয়াত: ৩৭)
- নূহ আঃ আল্লাহ তায়ালাকে বলেন, আয় আল্লাহ তায়ালাকে বলেন, কি দিয়ে নেীকা তৈরি করবো?
- আল্লাহ তায়ালা বলেন শাল গাছ দিয়ে তৈরি করো।
🖊 পয়গম্বর নূহ শাল গাছ খোজতে থাকেন কিন্তু পৃথিবীতে তখনও শাল গাছ ছিলোনা। তাই আল্লাহ তায়ালার হুকুম নূহ পয়গম্বর শাল গাছ রোপন করেন। এই শাল গাছ বড় হতে ২০ বছর লেগে যায়,কোন বর্ণনায় ৪০ বছর আর কোন বর্ণনায় ১০০ শত বছর লেগে যায়।
শাল গাছ কেটে নূহ আঃ জাহাজ বানানো শুরু করেন। জাহাজটি তিনতলা বিশিষ্ঠ করেন;যার নিচের তলায় হিংস্র প্রাণী,দ্বিতীয় তলায় গবাদী পশু আর উপর তলায় থাকবে ঈমানদারগণ।এ জাহাজের দৈঘ্য ৮০ গজ,প্রস্থ ৫০ গজ রাখা হয়।
নূহ আঃ এর নৌকায় পায়খানা করার ঘটনাঃ
হযরত নূহ আঃ যখন নৌকা তৈরি করেন তখন তার উম্মতরা বিদ্রুপ করে।
তার উম্মত তার তৈরি করা কিসতীতে মলত্যাগ করে । একদিন এক কুষ্ঠরোগী মলত্যাগ করতে এসে কিসতীতে থাকা মলে পরে তার কুষ্ঠরোগ ভালো হয়ে যায়।বিষয়টি জানাজাানি হয়ে গেলে সবাই তা ওসুধ হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে দেয় ওরা,এমনি নেীকা ধুয়ে পানি পর্যন্ত নিয়ে যায় পান করার জন্য।
প্রিয় পাঠক, নূহ আলাইহিস সালামের কিশতিতে মলত্যাগের ঘটনাটি একটি ভিত্তিহীন ঘটনা।
নূহ (আঃ) এর মহাপ্লাবন এর সূচনা
হযরত নূহ আঃ এর স্ত্রী রান্না করার সময় হঠাৎ দেথতে পেলেন,চুলা থেকে পানি বের হচ্ছে। কুরআনে কারিম আল্লাহ তায়ালা বলেন,‘‘অবশেষে যখন আমার হুকুম এলো এবং চুলা উতলিয়ে উঠল (চুলা থেকে পানি বের হওয়া শুরু হলো) আমি বললাম , হে নূহ, এই নৌকায় প্রত্যেক বস্তু থেকে জোড়ায় জোড়ায় এবংযাদের উপর পূর্বেই হুকুম হয়ে গেছে তাদের বাদ দিয়ে আপনার পরিবার-পরিজন ও ঈমানদারদেরকে তুলে নাও।আর অতি অল্প লোকই তার সাথে ঈমান এনেছে” (সূরা হুদ, আয়াতঃ ৪০)
আল্লাহ তায়ালার হুকুমে হযরত নূহ (আঃ) প্রত্যেক প্রাণী থেকে এক জোড়া করে তোলা শুরু করেন।সর্বপ্র্র্র্র্রথম হযরত নূহের নৌকায় পিপড়া প্রবেশ করে আর সর্বশেষে গাধা নামক প্রাণী প্রবেশ করে।এসব প্রাণীর মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার তথা সিংহও ছিলো,সিংহ নামক প্রাণীকে আল্লাহ তায়ালা জড়াকান্ত্র করে দেন,যাতে দূর্বল থাকায় অন্যের উপর আক্রমণ করতে না পারে।
পৃথিবীর ইতিহাসে হযরত নূহ (আঃ) এর যামানার পূর্বে দুনিয়ায় কোন মানুষ বা প্রাণী জরাক্রান্ত হয়নি। সিংহ ই প্রথম।
হযরত নূহ (আঃ) মুমিনদেরকে উপর তলায় উঠিয়ে নেন,এদের মধ্যে তার তিন পুত্র- সাম,হাম,ইয়াসেফ ও তাদের স্ত্রীগণও ছিলো।হযরত নূহ (আঃ) এর পুত্র ছিলো কিনআন,সে ঈমান না আনায় নবীর পুত্র হওয়া সত্বেও নৌকায় ওঠার অনুমোধন পায়নি।তবে তার স্ত্রী মুসলমান হওয়ায় নৌকায় চড়েছিলো ঠিকই। (ইবনে কাসির)
আল্লাহ তায়ালার হুকুমে ‘‘নৌকা তাদেরকে নিয়ে পর্বতমালা সদৃশ তরঙ্গের উপর দিয়ে চলতে থাকে” হযরত নূহ (আঃ) পুত্র কিনআনকে ডাক দিয়ে তখনও দাওয়াত দেন; পুত্রকে বলেন- তুমি মুসলমান হয়ে নৌকায় চড়ো,আর কাফেরদের সঙ্গে থেকোনা।
কিন্তু ছেলে ঈমান আনার পরিবর্তে বলে উঠল- “আমি অনতিবিলম্বে কোন পাহাড়ে আশ্রয় নেবো,যা আমাকে পানি থেকে রক্ষা করবে। নূহ (আঃ) বললেন- আজকের দিনে আল্লাহর দেওয়া বিধান থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবেনা তবে তিনি যাকে দয়া করবেন।এমন সময় উভয়ে মাঝে পানির ঢেউ আড়াল হয়ে দাঁড়ায় যাঢেউ আড়াল হর ফলে কিনআন নিমজ্জিতদের অন্তভূক্ত হয়” (সূরা হুদ: আয়াত ৪৩ )
নূহ আ.-এর প্লাবন ও বুড়ির ঘটনা
নূহ (আঃ) এর মহাপ্লাবন এর পূর্বে এক বুড়ি হযরত নূহ (আঃ) কে বলেছিলো, হে নূহ প্লাবন এলে আমাকে তোমার কিসতীতে নিয়ে যেও।এদিকে কিসতীতে নূহ পয়গাম্বর সবাইকে নিয়ে ওঠে যান আর বুড়ি মাকে ভূলে যান।প্লাবন শেষে নূহ নবীর সাথে ঐ বুড়ির দেখা হলে,বুড়ি বলে উঠল, হে নূহ প্লাবনের কি খবর ? নূহ নবী উত্তর দিলেন- প্লাবন তো হয়ে গেছে। আল্লাহ তায়ালার ক্ষুদরতে তুমি বেঁচে গেছো।
সম্মানিত পাঠক! এ ধরনের ঘটনা অনেতক মুখে শুনা যায,যা সূম্পন্ন বানোয়াট।কুরআন হাদিসে থাকবে তো দূরের কথা,কোন বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থেও এ ঘটনা বরর্ণা করা হয়নি।
নূহ (আঃ) এর মহাপ্লাবন এর আলোচনা
নূহ (আঃ) এর মহাপ্লাবন এর ফলাফল
নূহ (আঃ) এর মহাপ্লাবন ছয় মাস ছিলো। আর এ ছয় মাসে সাড়া পৃথবী চক্কর দিয়ে জুদি পর্বতে নোঙ্গর করে।
জুদি নামক পর্বতে নূহ (আঃ) এর ভিড়েছিলো,যা কুরআন কারীম দ্বারা প্রমাণিত। সূরা হুদের ৪৪ নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে- “ হে জমিন, তুমি নিজ পনিকে শুষে নাও আর হে আকাশ, তুমি থেমে যাও। ফলে পানি কমে গিয়ে আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়ন হয়।আর নৌকা জুদি পর্বতে থেমে যায়।বলা হলো- জালেমরা ধ্বংস হোক”
জুদি পর্বত কোথায় অবস্থিত ? তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতামত পাওয়া যায়।অনেকের মতে ইরাকের মাওসেল শহরে অবস্থিত,যেখানে হযরত নূহ (আঃ) এর জাতি বসবাস করতো।আবার কারো মতে জুদি পর্বত তুরষ্কে অবস্থিত।
______________________________________________
তথ্যসূত্রঃ সূরা হুদ,সূরা নূহ,তাফসিরে মারেফুল কুরআন,ইবনে কাসির,মসিক আল কাউসার,আহলে হক মিডিয়া,মুফতি মুসতাকুন্নবী (দা.বা.) ও আওয়ার ইসলাম সহ অনলাইন বিভিন্ন ওয়েবসাইট
0 Comments