ইসলামের পাঁচ রুকুন এর একটি হলো রমজানের রোজা। “রোজা” শব্দটি উর্দু বাংলা ও ফারসি ভায়ায় ব্যবহার হয়,কিন্তু আরবিতে নয়। আরবী ভাষায় “সাওম” বলা হয়,যার শাব্দিক অর্থ বিরত থাকা।পরিভাষায় আল্লাহর সুন্তষ্টির জন্য রোজা রাখার নিয়তে সুবহে সাদিক’র সময় থেকে নিয়ে সূর্য ডুবে যাওয়া পর্যন্ত পানাহার,স্ত্রী সম্ভোগ ও সমস্ত রোজা ভঙ্গকারি কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকাকে সাওম বলা হয়।
রমজান মাসের রোজা কাদের উপর ফরজ
চলমান শাবান মাস যাওয়ার পর যদি রমজানের চাঁদ দেখা যায়, প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমান নর-নারির উপর রমজান মাসের রোজ রাখা ফরজ। ২০২৩ সালের ১ম রমজারে তারিখ জানতে নিচের ভিডিওতে ক্লিক করুন
রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার শর্তাবলী
✅ মুসলমান হওয়া। সুতরাং হিন্দু,খৃষ্টান সহ অন্যান্য ধর্মাবল্বীদের উপর রমজান মাসের রোজা ফরজ নয়।একথায় যাদের ঈমান নেই,তাদের উপর ইসালামের কোন বিধানাই প্রয়োজ্য নয়, এর জন্য অবশ্যই তাদের প্রথম ঈমান গ্রহন করতে হবে।
✅ মুকাল্লাফ হওয়া অর্থাৎ প্রাপ্ত বয়স্ক ও ঞ্জানবান (বুদ্ধি-বিবেক) হওয়া।
✅ রোজা রাখতে প্রতিবন্ধক ওযর থেকে মুক্ত হওয়া।যেমন মেয়েদের মাসিক ও নেফাস না থাকা ইত্যাদি।
✅ মুকিম অর্থাৎ সফরে না থাকা
👆 উপরেল্লিখিত রোজার শর্ত তথা প্রত্যেক সুস্থ, মুকীম,বালেগ পুরুষ এবং হায়েয-নেফাসমুক্ত বালেগা নারীর উপর পূর্ণ রমযান রোযা রাখা ফরয।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
“হে মুমিনগণ, তোমাদের পূর্ববর্তীদের ন্যায় তোমাদের উপরও রোজা ফরজ করা হয়েছে,যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো” (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৮৩)
عن أبي هريرة، قال: لما حضر رمضان، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: قَدْ جَاءَكُمْ رَمَضَانُ، شَهْرٌ مُبَارَكٌ، افْتَرَضَ اللهُ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ، تُفْتَحُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ، وَتُغْلَقُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَحِيمِ، وَتُغَلُّ فِيهِ الشَّيَاطِينُ، فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ، مَنْ حُرِمَ خَيْرَهَا، فَقَدْ حُرِمَ.
হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত, রমজান মাস আসলে আল্লাহর রাসূল - সাল্লাল্লাহু আলাইহি য়ো সাল্লাম বলেন, তোমাদের নিকট বরকতময় মাস রমজান এলো, আল্লাহ তায়ালা এ রমজান মাসের রোজা তোমাদের উপর ফরজ করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দুয়ারসমূহ খোলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দূয়ারসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় আর শয়তানদের শিকল দিয়ে বন্ধী করা হয়। রমজান মাসে এমন একটি রজনী রয়েছে,যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত,সে প্রকৃতপক্ষে বঞ্চিত।( মুসনাদে আহমদ, হাদিস ৭১৪৮; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২৪১৬)
রমজান মাসের রোজা একটি ফরজ ইবাদত।কোন শরয়ী ওজর ব্যতিত রমজানের রোজা কবিরা গুনাহ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।হাদীস শরিফে ইচ্ছাকৃতভাবে রমজানের রোজা পরিত্যাগকারীদের জন্য কঠোর হুশিয়ারী রয়েছে।আল্লাহ’র রাসূল - সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- বলেন,
من أفطر يوما من رمضان من غير رخصة ولا مرض لم يقضه صوم الدهر كله وإن صامه
অর্থাৎ শরিয়ত প্রদত্ত কোন অবকাশ ও কোন অসুস্থতা ব্যতিত যদি কেউ রমজান মাসের কোন দিন রোজা ছেড়ে দেয়,তাহলে তার সমস্ত জিন্দেগীতে রোজা রাখলেও এর ক্ষতিপূরণ হবে না।(তিরমিজি, আবূ দাউদ ও ইবনে মাযাহ)
রমজান মাসে রোজার ফজিলত
হাদিস শরীফে রোজার ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে।তন্মদ্ধে কয়েকটি রোজার ফজিলত সম্পর্কিত হাদিস উপস্থাপন করছি।
✅ আল্লাহ তা’য়ালা রোজাদারের গুনাহ ক্ষমা করে দেন।
عن أبي هريرة قال،قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:مَنْ صَامَ رَمَضَانَ، إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
হযরত আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমান ও সাওয়াব পাওয়ার আশায় রোজা রাখবে,তার অতিতের গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।(বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফ)
✅ অন্য এক হাদিসে হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিতে আছে যে,
الصلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُ إِلَى الْجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُن إِذَا اجْتَنبَ الْكَبَائِر
পাঁচওয়াক্ত নামাজ,এক জুম’আ থেকে আরেক জুম’আ, এক রমজান থেকে আরেক পর্যন্ত সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়,যদি সে কবিরা গোনাহ থেকে বেচেঁ থাকে। ( মুসলিম শরিফ, হাদিস:২৩৩)
✅ রোজা রাখার কারণে মুখে গন্ধ হয়,সেটা আল্লাহর কাছে প্রিয়।যেমন হাদিস শরিফে এসেছে
وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ المِسْكِ
ঐ সত্তার কসম যার হাতে মুহাম্মদের প্রান, রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ মেশকের সুগন্ধি চেয়ে অধিক সুগন্ধিময় (বুখারী মুসলিম)
✅ হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল - সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম - বলেন,
لِلصّائِمِ فَرْحَتَانِ يَفْرَحُهُمَا : إِذَا أَفْطَرَ فَرِحَ، وَإِذَا لَقِيَ رَبّهُ فَرِحَ بِصَوْمِهِ. وفي رواية : اذا لقى الله فجزاه فرح
✅ হযরত সাহল ইবনে সাদ রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম - বলেন,
إن فِي الجَنّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرّيّانُ، يَدْخُلُ مِنْهُا الصّائِمُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، يُقَالُ : أَيْنَ الصّائِمُونَ؟ فَيَقُومُونَ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ
অর্থাৎ জান্নাতে রায়্যান নামক একটি দরজা রয়েছে। রোজাদাররা কিয়ামতের দিন এ দুয়ার দিয়ে প্রবেশ করবে,অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা করা হবে, রোজাদারেরা কোথায়? রোজাদারগণ উঠে দাঁড়াবে - অন্য কেউ এ দুয়ার দিয়ে প্রবেশ করবে না - এবং তারা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, দুয়ার বন্ধ করে দেয়া হবে আর অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না
আরো পড়ুন....
✅ রমজান মোবারককে কিভাবে স্বাগত জানাবো।বিস্তারিত এখানে ক্লিক করুন
0 Comments